William Shakespeare – Bangla Translation (Part 4 of 7)

কিং লিয়ার – উইলিয়াম শেক্সপিয়ার – বাংলা অনুবাদ – ৪
৩য় পর্বের পর থেকে শুরুঃ
অবাক হয়ে বললেন লিয়ার, কী বলছ, আমি ক্ষমা চাইব? তুমি কি আমায় দীন-হীন ভিখারির বেশে দেখতে চাও? এই বলে নতজানু হয়ে রাজা আবার বললেন, আমি করজোড়ে তোমার কাছে পোশাক, খাদ্য এবং আশ্রয় ভিক্ষা চাইছি। ভেঙে পড়লেন রাজা লিয়ার।
রিগান বলল, না সেটা সম্ভব নয়।
লিয়ার বললেন, আমার অনুচরের সংখ্যা কমিয়ে দেবার কথা বলে গনেরিল অপমান করেছে আমায়। রূপ আর শক্তির গর্বেই সে সাহস পেয়েছে এরূপ কাজ করার। সে ধ্বংস হয়ে যাবে ঈশ্বরের ক্রোধে। কিন্তু তুমি এক মধুর স্বভাবের মেয়ে। আমার শখ-আহ্লাদ বন্ধ করে দিয়ে আমায় অপমান করতে তুমি সাহসী হবে না আর সে ইচ্ছাও তোমার নেই, তা আমি জানি। আমি তোমার বাবা আর তুমি আমার অর্ধেক সম্পত্তির উত্তরাধিকারিণী— সেকথা তুমি নিশ্চয়ই ভুলে যাবে না। এই কথা বলে থেমে গেলেন রাজা।
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর কেন্টের কথা মনে পড়ল রাজা লিয়ারের। তিনি বললেন, ‘আমি জানতে চাই কার এত দুঃসাহস যে আমার দুতের পায়ে এই যন্ত্রণাদায়ক কাঠের খুঁটোটা পরিয়েছে?’
এমন সময় দূর থেকে জোরদার গলার আওয়াজ শুনতে পেয়ে কর্নওয়াল জিজ্ঞেস করল রিগানকে, কে এল?
‘বোধ হয় আমার দিদি। তারই আসার কথা ছিল,’ বলল রিগান। তারপর অসওয়াল্ডকে আসতে দেখে জিজ্ঞেস করল, ‘দিদি কি আসছেন?’
অসওয়াল্ডকে দেখেই চিৎকার করে উঠলেন রাজা লিয়ার, আমার সামনে থেকে তুই দূর হয়ে যা ঘৃণ্য গনেরিলের প্রশ্রয় পাওয়া পাজি শয়তান চাকর কোথাকার! তারপর রিগানকে বললেন, আমার দূতের পায়ে কে খুঁটো পরিয়েছে আশা করি তুমি তা জান না। হে ঈশ্বর, মানুষের প্রতি তোমার মমতা সাহায্য করুক আমায়। হায় রিগান, এই ঘৃণ্য নারী গনেরিল তোমার এত প্রিয়, যে তুমি ওর হাত ধরেছ।
উদ্ধতভাবে উত্তর দিল গনেরিল, অবুঝের মতো তোমার কাজ-কর্মই বিচারের শেষ কথা নয়।।
লিয়ার বললেন, আমি নিজেই আশ্চর্য হয়ে যাচ্ছি আমার সহ্যশক্তির সীমা দেখে। বল, কে আমার দূতের এ অবস্থা করেছে?
‘আমি করেছি’, বলল কর্নওয়াল, ‘কিন্তু তাতেও ওর উপযুক্ত শাস্তি হয়নি।’
অবাক হয়ে বললেন লিয়ার, তুমি, তুমি করেছ এ কাজ?
রিগান বলল, বাবা, আপনি বৃদ্ধ হয়েছেন, আগের মতো আর সবল নন। এখন আপনার উচিত ভাগাভাগি করে একবার আমার কাছে অন্যবার দিদির কাছে গিয়ে থাকা। বর্তমান অবস্থায় আমাদের পক্ষে সম্ভব নয় আপনাকে আশ্রয় দেওয়া।
লিয়ার বললেন, তার চেয়ে আমি বন্য জন্তুর সাথে বাস করব, সহ্য করব দারিদ্র্যের চরম কশাঘাত, প্রয়োজনে আশ্রয় ভিক্ষা চাইব ফ্রান্সের রাজার কাছে- তবুও আমি সেখানে যাব না অনুচরদের ছেড়ে। সেরূপ পরিস্থিতি হলে আমি বরং ক্রীতদাসটার অবশ্য হয়ে থাকব, তবুও সেখানে যাব না। আশা করি তুমি আমায় সেরূপ দুর্ভাগ্যের মুখে ঠেলে দেবে না রিগান। আমার দেহের দুষ্ট ক্ষত হলেও আমি তো জানি তুমি আমারই মেয়ে। আমি তোমায় অভিশাপ দেব না। নিজের ভুল একদিন তুমি নিজেই বুঝতে পারবে। আমি বরঞ্চ আমার অন্য মেয়ে রিগানের কাছেই থাকব আর সাথে রইবে একশোজন নাইট।’
রিগান বলল, আমার কিন্তু ইচ্ছে নয় বাবা যে আপনি আমার কাছে থাকেন। বুড়ো হয়ে আপনার জ্ঞান-গরিমা সব লোপ পেয়েছে। একমাত্র আমার দিদিই সঠিক জানে সে কী করেছে।
লিয়ার বললেন, তোমার কি মনে হয় তুমি যা বলছ তা সত্য?
রিগান বলল, হ্যা, আমি সত্যি কথাই বলছি। খুব বিপদের দিনেও পঁচিশজন লোক রাখার কোনও অর্থ হয় না। আর মালিকানা যেখানে ভাগ হয়ে গেছে, সেখানে এত লোকের মাঝে বিশৃঙ্খলা দেখা দেওয়াটাই তো স্বাভাবিক।
এবার গনেরিল আর রিগান দুজনেই একসাথে বলল, “বাবা, আমাদের সাথে না থাকার কোনও যুক্তিসঙ্গত কারণই আমরা খুঁজে পাচ্ছি না। আমরা তীক্ষ্ণ নজর রাখব যাতে আপনার প্রতি কোনও অন্যায় না হয়।
রিগান বলল, ‘পঁচিশ জনের বেশি নাইট কিন্তু আপনি সাথে রাখতে পারবেন না।’
লিয়ার বললেন, ‘ওরে অকৃতজ্ঞ মেয়েরা, তোরা কি ভুলে গেছিস যে সব সম্পত্তি আমারই?’
‘আপনার যথাসর্ব আপনি দান করেছেন আমাদের’, উত্তর দিল রিগান।
লিয়ার বললেন, আমি চাই না সে সব সম্পত্তি ফেরত নিতে। কিন্তু কোন সাহসে তোরা বলছিস আমার অনুচরের সংখ্যা কমাতে?
উদ্ধতভাবে আবারও তার মতামত ব্যক্ত করল রিগান।
ভেতরে ভেতরে রেগে গেলেও অসহায়ভাবে বললেন রাজা, উপরে ভালোমানুষির নিচে তোর এই নীচ মনের কথা আগে জানা ছিল না গনেরিল, একশোর অর্ধেক পঞ্চাশ হলেও তা কিন্তু পঁচিশের দ্বিগুণ। আজ থেকে তোর প্রতি আমার ভালোবাসাও দ্বিগুণ হল, আমি তোর কাছেই থাকব।
গনেরিল বলল, এখানে যা লোক আছে তার ডবল লোক সেখানে সেবা করবে আপনার। কিন্তু আপনার অনুচরদের সেখানে নিয়ে যাবার কোনও দরকার নেই।
লিয়ার বললেন, ‘কেউ জানে না, প্রয়োজনের সীমা কোথায়। শীত নিবারণের জন্য প্রয়োজনীয় পোশাক গায়ে থাকা সত্ত্বেও যেমন তুমি অতিরিক্ত কিছু পরেছ, তেমনি মনে রেখ প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা কিছু মানুষকে পশুদের চেয়ে আলাদা করে তা হল সহনশীলতা। এই সহনশীলতাই এখন আমার দরকার। হে ঈশ্বর, তুমি করুণা করে এই বুড়ো লোকটির সহ্যের সীমা বাড়িয়ে দাও। তোমার চক্রান্তেই যদি আমার মেয়েদের মন বিষিয়ে ওঠে তাহলে তোমার কাছে আমার মিনতি, চোখের জলে আমায় না ভিজিয়ে সাহায্য কর আমার রাজ্যকে জ্বলে উঠতে। তাই কাঁদব না আমি, ফেলব না চোখের জল। এই ঝড়জলের মাঝে যদিও আমায় আশ্রয়হীন হয়ে বাইরে বেরিয়ে যেতে হবে, তবুও কেঁদে কেঁদে আমি ভারাক্রান্ত হতে দেব না আমার মনকে! সব কষ্ট সহ্য করব আমি। কী বোকা আমি! এই অসহ্য যাতনা পাগল করে তুলেছে আমায়’– বলেই ছুটে বেরিয়ে গেলেন রাজা। সেই সাথে গ্লচেস্টার ও বিদূষকও চলে গেলেন সে স্থান ছেড়ে।
রিগান বলল, এই ছোটো বাড়িটাতে একসাথে থাকার জায়গা হত না বুড়ো আর তার অনুচরদের।
‘সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যের আশা জলাঞ্জলি দিয়ে এই ঝড়ের রাতে দুর্ভোগ পোহাবার জন্য দায়ী তার নিজের বোকামি’, বলল গনেরিল।
রিগান বলল, ‘লোকজন ছাড়া তার নিজের ঢোকার ব্যাপারে তো কোনও বাধা ছিল না।
‘নিশ্চয়,’ বলল গনেরিল; ‘কিন্তু গ্লচেস্টারকে দেখছি না কেন?’
কর্নওয়ালের ডিউক বলল, ‘তিনি গেছেন রাজার সাথে! আবার ফিরে আসবেন।
এ সময় গ্লচেস্টার ফিরে এসে বলল, রাগে পাগল হয়ে ঘোড়া ছুটিয়ে চলে যেতে চান রাজা।
‘কোথায়?’ জানতে চাইল রিগান।
গ্লচেস্টার উত্তর দিল, জানি না।
‘তার চলে যাওয়াই উচিত’, বলল অসওয়াল্ড।
সায় দিয়ে বলল গনেরিল, তাকে ফিরে আসার জন্য অনুরোধ করা আমাদের উচিত নয়।
কিন্তু বিষন্নতার ছায়া পড়ল গ্লচেস্টারের মুখে। তিনি বললেন, একেই এই ঝড়-জলের রাত, তায় ঘন অন্ধকার। এর মধ্যে কী করে বাইরে যাবেন তিনি?
অমনি তাড়াতাড়ি বলল রিগান, একগুয়ে লোকদের স্বভাবই এই। আর গুণের দিক দিয়ে ওর সঙ্গী-সাথীরা আরও এককাঠি উপরে। যাইহোক, দরজাটা দিয়ে দাও যাতে তারা কেউ ঢুকতে না পারে।
—— – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – –
চিৎকার করে জানতে চাইল কেন্ট, এই দুর্যোগপূর্ণ রাতে কে ওখানে?
উত্তর এল, আমি ওই লোক যার কাছে প্রচণ্ড ঝড় কোনও নতুন কথা নয়।
কেন্ট বলল, ‘গলা শুনে আমি তোমায় চিনতে পারছি না। তুমি তো রাজার অনুচর। তাহলে বল রাজা কোথায়?
রাজানুচর বলল, ‘পাগল হয়ে তিনি আজ ছুটে বেড়াচ্ছেন গুহায় গুহায়। এই পৃথিবীটাকে ধ্বংস করে ফেলার জন্য তিনি ব্যথিত হৃদয়ে অনুরোধ করছেন সমুদ্রের জলরাশিকে। প্রবল ঝড় বৃষ্টিকে উপেক্ষা করে দুহাতে মাথার চুল উপরে তুলে বিপদের বাতাবরণকে উড়িয়ে দিয়ে তিনি মেতে উঠেছেন এক বিকৃত বীভৎস খেলায়। শুধুমাত্র বিদূষককে সাথে নিয়ে অনবরত চিৎকার করে চলেছেন তিনি।’
‘বিদূষক ছাড়া আর কি কেউ তার সাথে নেই?’ জানতে চাইল কেন্ট।
‘না, আর কেউ নেই। শুধু সেই চেষ্টা করছে হালকা হাসির মধ্যে দিয়ে রাজার শোক কমিয়ে দেবার’, উত্তর দিল অনুচর।
কেন্ট বলল, শোন, ‘তুমি আমার বিশেষ পরিচয়। তোমাকে একটা গোপন কথা বলতে চাই আমি। কথাটা বাইরে প্রকাশ না পেলেও জেনে রেখ একটা ঠান্ডা লড়াই চলছে আলবেনি আর কর্নওয়ালের মাঝে। তারা একে অপরকে ঠকিয়ে রাজ্যের উন্নতি করতে চাইলেও তাদের ভৃত্য ও অনুচরেরা রাজার উপর আরোপিত ষড়যন্ত্র, তার প্রতি অন্যায়-অত্যাচারের যে খবর শুনছে। দেখছে — তা সবই গোপনে পাঠিয়ে দিচ্ছে ফ্রান্সে। একদল ফরাসি সৈন্যও গোপনে রয়েছে বন্দরে। আমার নির্দেশ অনুযায়ী তুমি তাড়াতাড়ি সেখানে গিয়ে রাজার দুরবস্থার কথা একজন লোককে জানাবে। পারিশ্রমিক হিসেবে এই থলিটা আমি তোমায় দিচ্ছি। আর ফ্রান্সের রানি কর্ডেলিয়ার সাথে দেখা করে এই আংটিটা তাকে দিলেই তিনি তোমায়ে জানিয়ে দেবেন আমার পরিচয়। এবার তুমি যাও।’
অনুচরটি কিছুদূর যাবার পর ফের তাকে ডাকলেন কেন্ট, বললেন, ‘ওহে শোন, আগের চেয়েও একটা বেশি গোপনীয় কথা আছে তোমার সাথে। কথাটা হল, যত শীঘ্র সম্ভব আমাদের রাজাকে খুঁজে বের করতে হবে। আমাদের উভয়ের মধ্যে যেই আগে খবরটা পাক, সে তা জানিয়ে দেবে অন্যদের। খুব সাবধান, এ কথা যেন কেউ জানতে না পারে।’
‘আপনার আদেশ যথারীতি পালিত হবে’- বলে অনুচর বিদায় নিল।
– – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – – –
লিয়ার বললেন, হে বাতাস, তুমি সমস্ত শক্তি দিয়ে চূর্ণ করে দাও এ পৃথিবীটাকে। আমার রাজ্যের আগুনকে বাড়িয়ে দিয়ে তুমি তৈরি কর দাবানল। হে মেঘ, অঝোর ধারায় বর্ষিত হয়ে তুমি নেমে এস পৃথিবীতে, ধুয়ে মুছে শেষ করে দাও সব কিছু। অবিশ্রান্ত আঘাত হানো গির্জাগুলির চূড়ার উপর।হে আগুন, দ্রুতগতিতে নেমে এসে তুমি জ্বালিয়ে দাও আমার সাদা দাড়ির গোছাগুলি আর তোমার প্রভু কঠিন বজ্রকে বলো যেন তার আমোঘ শক্তিতে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে এই পৃথিবীটা আর সে যেন ধ্বংস করে দেয় অকৃতজ্ঞ মানুষের বাসস্থান-মায়াজালে ঘেরা এই বিশ্বকে।
বিদূষক বলল, আপনি বরং ঘরে এসে ওদের তোষামোদ করুন। আজকের রাতটা বড়োই দুর্যোগপূর্ণ।
আপন মনে বললেন লিয়ার, ‘হে প্রাকৃতিক বস্তুসমূহ! তোমরা নিশ্চয়ই আমার মেয়ের মত অকৃতজ্ঞ নও কিংবা আমার অধীনস্ত নও। এক অসহায় দুর্বল বৃদ্ধ করজোড়ে মিনতি জানাচ্ছে তোমাদের কাছে —- আরও প্রবল এবং প্রচণ্ড হয়ে ওঠ তোমরা। হে বিদ্যুৎ, আগুন, বাতাস, তোমরা সবাই নেমে এস আমার মাথার উপর। তোমরা আর দেরি করো না। এই দেখ, এক ক্রীতদাসের মতো আমি তোমাদের করুণাপ্রার্থী। আমায় দয়া কর তোমরা।
একটু থেকে কান পেতে বজ্রের গর্জন ও আওয়াজ শুনে বললেন লিয়ার, ঐ দূর আকাশের বজ্র, বিদ্যুৎ, বৃষ্টি – ওদের সাথে আমার রক্তের সম্পর্ক না থাকা সত্ত্বেও আমার মতো বুড়োর প্রতি অন্যায়-অত্যাচারের প্রতিবাদে তারা সবলে রুখে দাঁড়িয়েছে আমার দু-মেয়ের বিরুদ্ধে, সত্যিই এ খুব আশ্চর্যের ব্যাপার।
বিদূষক বলল, মহাশয়, একটা প্রচলিত প্রবাদ আছে যে শিরস্ত্রাণ তারই সাজে যার মাথার উপর আছে একটা বাড়ি—যে লোক পায়ের বুড়ো আঙুলের সাহায্যে মনের কাজ করে, কাটা তার পায়ে না ফুটে অন্তরে বেঁধে আর দুঃস্বপ্নে ভরিয়ে তোলে তার সারা রাত। আর যে প্রকৃতই সুন্দরী, আয়না কখনও বিকৃত করে দেখায় না তার সারা মুখ।
এ সময় দূর থেকে একজন জিজ্ঞেস করল, কে ওখানে? সাড়া দাও! তারপর কাছে এসে চিনতে পেরে বলল, ‘হায় ঈশ্বর, এইদুর্যোগপূর্ণ রাতে নিশাচর প্রাণীরাও আশ্রয় নিয়েছে তাদের বাসস্থানে, আর রাজা লিয়ার, এই দুর্যোগের রাতে আপনি রয়েছেন বাইরে?’
লিয়ার বললেন, ‘গোপনে গোপনে নানা পাপ কাজের দ্বারা যে সমস্ত হতভাগা তাদের হাতকে কলঙ্কিত করে মানুষের রক্তে, মিথ্যা শপথ নিয়ে বাইরে যারা সৎ ও ধার্মিকের ভান করে, বন্ধুত্বের ভান করে কিন্তু লিপ্ত হয় নানা ষড়যন্ত্রে অথচ শাস্তি পায়নি তারা এসব জঘন্য কাজের জন্য। আজ সময় এসেছে তাদের নিজেকে ঈশ্বরের কাঠগড়ায় সঁপে দেবার। আমিও সেইসব হতভাগাদের একজন যার শাস্তির পরিমাণ ছাপিয়ে গেছে পাপের পরিমাণকেও।’
লোকটি বলল, মহারাজ, আমার বিনীত অনুরোধ বিশ্বস্ত কয়েকজনকে নিয়ে আপনি ঢুকে পড়ন ওই কুটিরে আর আমি যাচ্ছি কিছুক্ষণ আগে প্রত্যাখ্যাত পরিশ্রান্ত ঐ নিষ্ঠুর মানুষগুলির প্রাসাদে।
লিয়ার বললেন, তাই চল ছোকরা। ঠান্ডায় কাহিল হয়ে পড়ছে আমার শরীর, লোপ পাচ্ছে আমার বুদ্ধি। আমার শোবার ঘরটা কোথায়? বিদূষক, তুমি শুয়ে পড় ঐ বাক্সটায়। ঈশ্বরের কী আশ্চর্য করুণা! এখনও পর্যন্ত ও আমায় ছেড়ে যাননি।
‘তবে যাবার আগে একটা ভবিষ্যদ্বাণী করে যাই– বামন এবং পূজারিরা যখন বেশি কথা বলবে, বেশি জল মেশানো হবে মদে, যখন সামন্তরা করবে দর্জির কাজ, নাস্তিকদের শাস্তি ভোগ করবে শ্রমিকেরা, ধনীরা ভুলে যাবে ধার করতে, দুর্লভ হবে গরিব নাইটের সংখ্যা, মানুষ ভুলে যাবে মিথ্যা কথা বলা আর চোর ও মানুষের মাঝে থাকবে না কোনও পার্থক্য — ঠিক তখনই ঘটবে মানুষের আত্মসাক্ষাৎ। তবে ব্রিটেন কিন্তু বিপর্যস্ত হবে দারুণ বিশৃঙ্খলায়।’
—————————-
হতাশায় ভেঙে পড়ে গ্লচেস্টার বলল, শোন এডমন্ড, আমার প্রভু ও প্রভুপত্নী এমনই নির্দয় যে তারা আমার সব ক্ষমতা কেড়ে নিয়েছে যাতে আমি বৃদ্ধ রাজাকে আশ্রয় দিতে না পারি। আর তারা কড়াভাবে আমায় শাসিয়ে গেছে এসব সত্ত্বেও আমি যদি রাজার সাথে যোগাযোগ করি, তাহলে চিরকালের মতো এ পৃথিবী ছেড়ে চলে যেতে হবে আমায়।
নিরীহের ভান করে এডমন্ড বলল, সত্যিই বাবা, এ কাজটা ওদের পক্ষে খুবই দোষণীয়।
গ্লচেস্টার বলল, চুপ এডমন্ড, কেউ শুনতে পাবে। কারও চোখে যাতে না পড়ে সেজন্য আমি বিশ্বাস করে তার ছেলেকে রেখেছি। আর শোন, রাজার প্রতি অপমানের প্রতিশোধ নেবার জন্য সেনাবাহিনীর একটা অংশ বাইরে থেকে এখানে গোপনে আশ্রয় নিয়েছে। আমার সম্পর্কে ওরা কিছু জানতে চাইলে তুমি বলবে যে আমি অসুস্থ। তবে জেনে রেখ, ওদের নিষেধ সত্ত্বেও আমার প্রাক্তন মনিবকে খুঁজে বের করে তাকে যথাসাধ্য সাহায্য করব আমি। এডমন্ড, তুমি সাবধানে থেক।
গ্লচেস্টার চলে যাবার পর এডমন্ড ছুরি শানাতে বসল তার উদ্দেশে। মনে মনে সে ঠিক করল বাবার পরিকল্পনার সব কথা ডিউককে জানিয়ে দিয়ে সে হাত করবে বাবার সম্পত্তি। কারণ যুবকদের উন্নতির জন্য প্রয়োজন বৃদ্ধদের হটানো।
বিনীতভাবে রাজাকে অনুরোধ করল কেন্ট, প্রভু, দয়া করে আপনি এ কুটিরে প্রবেশ করুন।
‘আমায় একটু একা থাকতে দাও কেন্ট, বললেন লিয়ার, আমার হৃদয়টা ভেঙে যাক তাই কি তুমি চাও? তুমি ভাবছ এই প্রচণ্ড ঝড়ের কষ্ট আমার কাছে দুঃসহ বলে মনে হচ্ছে? না, এর চেয়ে অনেক বেশি কষ্ট আমি সয়েছি এই দেহে। আমার মনের এই কষ্ট, সমুদ্র ঝড়ের আঘাতে সম্পূর্ণভাবে অসাড় করে দিয়েছে আমার অনুভূতিগুলিকে। আমি আর চোখের জল ফেলব না, প্রতিশোধ নেব আমার সন্তানদের অকৃতজ্ঞতার। মেয়েদের সব কিছু দান করে নিঃস্ব-রিক্ত হয়ে গেল বাবা, আর তাকেই কিনা নিরাশ্রয় করে তাড়িয়ে দিল মেয়েরা? যাকগে, আমি ভুলে যাব সে কথা তুমি চলে যাও কেন্ট। এর চেয়ে অনেক বেশি ক্ষতির হাত থেকে আমায় রক্ষা করবে এ ঝড়। তুমিও ঘরে চলে যাও বিদূষক। হে ঈশ্বর, তুমি পরম দয়াবান! কোনও দিন সে কথা ভাবিনি। আজ তুমি আমায় ভাবার সুযোগ দিয়েছ। কী করে দরিদ্র নিরাশ্রয় মানুষগুলি প্রচণ্ড ঝড়-বৃষ্টির আঘাত সহ্য করে। হে ধনী লোকেরা, ঈশ্বরের কৃপালাভের জন্য তোমাদের উচিত প্রয়োজনের অতিরিক্ত টাকা-পয়সা গরিব জনসাধারণের জন্য দান করা।’
হঠাৎ একটা অদ্ভুত শব্দ শুনে গুহার ভেতর থেকে বেরিয়ে এল বিদূষক, বলল, ‘টম নামে একটা ভূত আছে গুহায়। ওগো, কে কোথায় আছ আমায় বাঁচাও।’
কেন্ট এগিয়ে এসে বললেন, ‘কে আছ, বেরিয়ে এস গুহার ভেতর থেকে।’
পাগলের মতো গুহার ভেতর থেকে বেরিয়ে এল এডগার, বলল, ‘পালিয়ে যাও তোমরা। একটা শয়তান সবসময় আমার পেছু তাড়া করছে।’
রাজা লিয়ার জানতে চাইলেন, আচ্ছা, তুমি কি নিঃস্ব হয়ে পড়েছ সবকিছু মেয়েদের দান করে?
‘আমার কী আছে?’ বলল টম, ‘জলে-স্থলে, স্বপনে-জাগরণে, সবসময় একটা শয়তান আমায় তাড়া করে ফিরছে। যার পথ নির্দিষ্ট করা আছে বিপদের মধ্য দিয়ে, তার কীই বা থাকতে পারে? ঈশ্বরের দোহাই, ক্ষুধার্ত টমকে কিছু খেতে দাও। শয়তান অবিরাম জ্বালাতন করছে তাকে। হয়তো সেই শয়তানটা এখানেই থাকে।’
————————————————————————————————————————————————————————————
##Discuss the three stages of Chaucer’s poetic development. /Chaucer as a poet.
##Why is Chaucer called the father of English poetry?
##What picture of Anglo Saxon life do you get in Beowulf?